|

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

কিসমিস হল শুকনো আঙ্গুর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিসমিস তৈরি করা হয়। কিসমিস
খাওয়ার অনেক উপকারিতা এবং অপকারিতা আছে। আজকের এই পোষ্টে কিসমিস খাওয়ার
উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব। কিসমিস আমাদের শরীরের
আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্তের লাল যে কণিকা আছে তার পরিমাণ ও বাড়ায়। 

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয় কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, শুকনো কিসমিস
খেলে কি হয় এবং কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
সম্পর্কে জানুন

    কিসমিস কি

    কিসমিস শুকনা ফল জাতীয় খাবার। কিসমিস আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হয়। কিসমিস আমাদের
    শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।

    কিসমিস কি ভাবে তৈরি করা হয়

    সাধারণত আমরা যে সকল আঙ্গুর খেয়ে থাকে সেগুলো থেকেই কিসমিস তৈরি করা হয়।
    আঙ্গুরকে রোদে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়।এছাড়া মাইক্রো ওভেন এর সাহায্যে ও
    কিসমিস তৈরি করা হয়। যেকোনো জাতের আঙ্গুর নিন। একটি পাত্রে আঙ্গুরের চেয়ে বেশি
    পানি দিয়ে ফোটান। এবার ফুটন্ত পানিতে আঙুর গুলোকে  ছেড়ে দিন। সিদ্ধ করা
    হয়ে গেলে আঙ্গুর গুলো তুলে পানি ঝরিয়ে রোদে শুকাতে দিন। প্রায় তিন সপ্তাহ রোদে
    শুকিয়ে ভিতরের আদ্রতা পুরোপুরি চলে গেলে পারফেক্ট কিসমিস তৈরি হয়ে যাবে।

    কিস মিস কত প্রকার ও কি কি

    আঙ্গুরের জাতের উপর নির্ভর করে কিসমিসের প্রকারভেদ। আমরা কিসমিস এর তিনটি প্রকার
    নিয়ে আলোচনা করব

    বাদামি কিসমিস: 

    বাদামি কিসমিস তৈরি করার জন্য তিন সপ্তাহ ধরে আঙ্গুর রোদে শুকাতে হয়। রোদে
    শুকানোর ফলে এর কালার বাদামি রঙের হয় এজন্য এদিকে বাদামী কিসমিস বলে

    সুলতানা কিসমিস: 

    সুলতানা নামের এক ধরনের আঙ্গুর পাওয়া যায় যা বীজহীন সবুজ ও গোলাকার হয়ে থাকে।
    এ ধরনের আঙ্গুরকে শুকিয়ে সুলতানা কিসমিস তৈরি করা হয়। এই ধরনের আঙ্গুর শুকানোর
    আগে এক ধরনের তৈলাক্ত দ্রবণে ভিজিয়ে রাখা হয়। কিসমিসের রং সোনালী অথবা হালকা
    বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে।

    বেদানা কিসমিস: 

    বেদনা কিসমিস কে কালো কিসমিস ও বলা হয়। কালো আঙ্গুর থেকে এদিকে তৈরি করা হয়। এর
    স্বাদ প্রায় টক মিষ্টি এবং আকারে ছোট।

    কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

    কিসমিস খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে নিচে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা
    আলোচনা করা হলো।

    রক্তশূন্যতা দূরীকরণ: আমাদের শরীরে যে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় এর অন্যতম
    কারণ হলো আয়রনের অভাব। কিসমিস আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্তের
    লাল যে কণিকা আছে তার পরিমাণ বাড়িয়ে তুলে। কারো শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে
    কিসমিস খাওয়া উচিত।

    হাটের সুস্থতায় কিসমিসের ভূমিকা: আমাদের হাটকে সুস্থ রাখতে কিসমিস অনেক
    উপকারী ভূমিকা পালন করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে কিসমিস খারাপ কোলেস্টেরল
    কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

    ক্যান্সার প্রতিরোধে কিসমিসের ভূমিকা: বর্তমান সময়ের একটি মরণব্যাধি হল
    ক্যান্সার কিসমিস ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করে একটি গবেষণায় দেখা
    যায় যে কিসমিসে অ্যান্টি যাডিকাল এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা
    ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। তবে জেনে রাখা ভালো যে কিসমিস ক্যান্সার সারাতে
    পারেনা। তাই ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার আগে কিসমিস খাওয়া ভালো।

    শক্তির উৎস হিসেবে কিসমিসের ভূমিকা: শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য
    কার্বোহাইড্রেট এর প্রয়োজন পড়ে আর এই কিসমিস হল কার্বোহাইড্রেটে এর প্রাকৃতিক
    উৎস। ব্যায়ামের সময় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বজায় রাখতে পারে কিসমিস ,যার ফলে
    শরীরের শক্তি সরবরাহ বজায় থাকে।

    ওজন নিয়ন্ত্রণে কিসমিস: গবেষণায় দেখা যায় যে কিসমিসে ডায়েটারি ফাইবার
    ও প্রিবায়োটিক রয়েছে। এই উপাদান স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সহযোগিতা
    করে যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

    মুখ ও দাঁতের যত্নে কিসমিস: কিসমিসে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল
    এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওলিয়ানলিক এসিড, যা দাঁতের ক্যারিস সৃষ্টিকারী
    ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করতে সহযোগিতা করে। এজন্য কিসমিস মুখ ও দাঁতের
    স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিসমিসের ভূমিকা: আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে যে
    ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা কিসমিস খেতে পারে না। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে
    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিসমিস এর ভূমিকা অপরিসীম যদি তা সীমিত পরিমাণে খান।
    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কিসমিস ভালো ভূমিকা পালন করে।

    যৌন সমস্যায় কিসমিসের ভূমিকা: কিসমিসে রয়েছে বরণ নামক খনিজ যা
    নারী-পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে

    কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

    কিসমিস খেলে আমরা অনেক উপকার পায়, উপকারের পাশাপাশি কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা ও
    রয়েছে। বেশি পরিমাণে কিসমিস খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় এলার্জির সমস্যা হতে
    পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যা হয় এবং টাইপ টু
    ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।

    কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

    আপন যদি কিসমিসের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিয়ম মেনে
    কিসমিস খেতে হবে। আসুন জেনে নেই আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় স্বাস্থ্যকর উপায়
    কিভাবে কিসমিস ব্যবহার করা যেতে পারে। 

    পিনার্ট বাটার এবং ফুড সালাদের সাথে মিশিয়ে কিসমিস খাওয়া যেতে পারে। কেক বানালে
    তাতে কিসমিস ব্যবহার করলে অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। দিনে আপনি ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম
    কিসমিস খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের খাদ্য এবং ওষুধ এর
    নিয়ম অনুসারে খেতে হবে

    কিসমিস কিভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়

    আমরা যখন বাজার থেকে কিসমিস কিনে নিয়ে আসি দেখা যায় যে অনেক সময় নষ্ট হয়ে
    যায় এর কারণ হলো আমরা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারি না। আপনি যখন কিসমিস সংরক্ষণ
    করে রাখবেন অবশ্যই মনে রাখবেন আপনাকে এমন একটি পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে যার ভেতরে
    কোন বায়ুর প্রবেশ করবে না। পাত্রের ভিতরের আদ্রতা কিসমিস পচে যাওয়ার ঝুঁকি
    বাড়িয়ে তুলে।

    শুকনো কিসমিস খাওয়া যাবে কিনা

    এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব হ্যাঁ অবশ্যই শুকনো কিসমিস খাওয়া যাবে এবং তা
    নিরাপদ। অবশ্যই মনে রাখবেন এলার্জি থাকলে ডাক্তারের নিয়ম মতে খাবেন।

    খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হবে

    আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে খালি পেটে কিসমিস খেলে পেটের অনেক সংক্রমণ থেকে
    রক্ষা পায়। এজন্য আমরা অনেকেই ঘুম থেকে উঠে সকালে খালি পেটে কিসমিস সেবন করে
    থাকি।

    কিসমিস ভেজিয়ে খেলে কি হয়

    কিসমিস ভিজিয়ে খেলে মন্ত্র ও পাকস্থলী সুস্থ রাখতে সহযোগিতা করে। কিসমিস
    কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার ও সমাধান দিয়ে থাকে।

    মধুর সাথে কিসমিস ভেজিয়ে খেলে কি হবে

    কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সকলেই জানেন। তবে আপনি জানেন কি কিসমিস মধুতে ভিজিয়ে
    খেলে এর উপকার দ্বিগুণ হয়ে থাকে। মধুতে ভিজিয়ে কিসমিস খাওয়া শ্বাসতন্ত্র
    কার্ডিওভাসকুলার এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী।

    শেষ কথা: কিসমিস এর উপকারিতা অপকারিতা এবং কিভাবে খাওয়ার নিয়ম
    জানলাম। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কিসমিস যোগ করতে পারি পরিমাণ মতো কিসমিস গ্রহণ
    করলে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হবে না।