ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত – ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা
প্রিয় পাঠক আপনি যেহেতু এই পোস্টটি ওপেন করেছেন তারমানে নিশ্চয় আপনি ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত এবং ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সমূহ কি
সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। যদি জানতে চেয়ে থাকেন তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায়
এসেছেন। কেননা এই পোস্টের মধ্যে আমরা ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত এবং
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সমূহ কি সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
সুতরাং, আর দেরি না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে নিয়ে ব্যায়াম করার পর খাবার
তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
এছাড়াও আমাদের এই পোস্টের মধ্যে আমরা ব্যায়াম সম্পর্কিত আরো যেসব বিষয়ে
বিস্তারিত আলোচনা করেছি সেগুলো হলো- ব্যায়াম করার সঠিক
সময় কখন, ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত, সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম
করা উচিত, সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো কিনা, সকালে ব্যায়াম করার সুবিধা কি এবং সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত সেই সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত – ব্যায়াম করার পর
খাবার তালিকা
- ভূমিকা
- ব্যায়াম করার সঠিক সময়
- ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত
- সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত
- ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা । ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত
- সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো
- সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত
- সকালে ব্যায়াম করার সুবিধা কি
- ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত – ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকাঃ শেষ কথা
ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত – ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকাঃ
ভূমিকা
আমাদের দেহের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রত্যাহিক জীবনের অন্যান্য
কাজকর্মের মত প্রতিদিন নিয়মমাফিক ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি একটি
বিষয়। প্রতিদিন একটি সুষ্ঠ নিয়মে ব্যায়াম করার ফলে আমরা যেমন শারীরিক দিক
থেকে ফিট থাকতে পারি তেমনি এর পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন রকমের জটিল রোগ-ব্যাধি
থেকেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। কিন্তু ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে অনেকেই একটি
ভুল কাজ করে থাকে। সেটা হলো ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা অনুযায়ী খাবার
গ্রহণ না করা।
যার ফলে এই ধরনের মানুষগুলো ব্যায়াম করার সুফল লাভ করার থেকে বঞ্চিত হয় তো
বটেই বরং এর ফলস্বরূপ বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হয়ে থাকে। আর
আপনিও যদি এই ধরনের কোন ভুল করে থাকেন তাহলে আশা করছি আমাদের আজকের আর্টিকেলে
উল্লেখিত ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানার পর
পরবর্তীতে আর এই রকম ভুল করবেন না। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল
আলোচনার অংশে যাওয়া যাক।
ব্যায়াম করার সঠিক সময়
একটা কথা প্রচলিত রয়েছে যে, শরীর ফিট তো আপনি হিট। আর এই শরীরকে সুস্থ
এবং ফিট রাখতে প্রয়োজন শারীরিক কসরত বা শরীরচর্চা। যদি আমরা সুস্থভাবে
বেঁচে থাকতে চাই তাহলে আমাদের ব্যায়াম করা জরুরী। প্রতিদিন যদি নিয়মিত
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা যায় তাহলে শরীর ফিট এবং মন ফুরফুরে থাকে।
পাশাপাশি শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না। তাই আপনার এখনই জেনে নাও উচিত
যে, শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়াম করার সঠিক সময় কোনটা।
ব্যায়াম করার সঠিক সময় নির্বাচন করার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।
এক্ষেত্রে আপনার প্রথমেই যে বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে আপনি কোন সময়
বেশি ফুরফুরে বা সতেজ থাকেন। আর আপনি কোন সময় ফ্রি থাকেন। আর এই
সময়গুলোতে আপনি নিয়মমাফিক দৈনিক ব্যায়াম করতে পারেন। এছাড়াও যদি আপনার
কোন সমস্যা না থাকে সেক্ষেত্রে দিনের যেকোনো সময় আপনি ব্যায়াম করতে পারেন।
তবে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যায়াম করলে সবথেকে বেশি উপকার পাওয়া
যায়।
আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্য ভালো করার উপায় – স্বাস্থ্য ভালো করার ঔষধ
রাতে ঘুমের পর সকালে উঠে ব্যায়াম করলে শরীরের মধ্যে একটা ফুরফুরে ভাব বিরাজ
করে। এছাড়াও সন্ধ্যার আগে বিকালে ব্যায়াম করা যায়। যেহেতু ব্যায়াম করার
সময় শরীর ঘেমে যায় সেজন্য স্বাভাবিক আবহাওয়য় ব্যায়াম করা উচিত। কেননা
দুপুরবেলা যদি ব্যায়াম করেন সেক্ষেত্রে আবহাওয়া গরম থাকে এর ফলে অল্প
ব্যায়াম করতেই আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। তাই দিনের শুরুতে এবং শেষে ব্যায়াম
করলে দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করা যায়। কেননা এই সময় পরিবেশের তাপমাত্রা
তুলনামূলক কম থাকে। কিন্তু যাদের সারাদিন ঘরেই থাকতে হয় তারা চাইলে দিনের
যেকোনো সময় ব্যায়াম করতে পারেন।
আপনি এতক্ষণ পর্যন্ত ব্যায়াম করার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। এখন ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত সে সম্পর্কে আপনার জেনে নেওয়া দরকার। কেননা শুধু ব্যায়াম করার সঠিক সময় সম্পর্কে জানলেই হবে না এর পাশাপাশি ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত সে সম্পর্কেও আপনার ধারণা থাকা দরকার।
ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত
ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত সেই প্রসঙ্গে শুরুতেই বলা যেতে পারে যে,
যেহেতুব্যায়াম করার পরে আমাদের শরীর ঘেমে যায় তাই ব্যায়াম করার পরে প্রথমে
আমাদেরকে হালকা ঠান্ডা স্থানে অথবা বাতাসের নিচে বসা উচিত। কিন্তু
সরাসরি ঠান্ডা কোন স্থানে যাওয়া যাবেনা। এতে শরীরে
উৎপন্ন হওয়া শরীরের মধ্যে ঘাম বসে গিয়ে সর্দি বা ঠান্ডা লেগে
যেতে পারে। এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষ্য মতে ব্যায়ামের পর ভারী খাবার না
খাওয়াই ভালো।
এর পরিবর্তে পানি বা প্রোটিন শেক খাওয়া যেতে পারে। এতে শরীরে
কর্মদক্ষতা ফিরে আসেন। ব্যায়াম শেষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর হালকা
খাবার খাওয়া যেতে পারে। দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর ভারী খাবার খাওয়া
যায়। আর এর পাশাপাশি ব্যায়ামের পর হালকা গোসল করে নিলে
সবথেকে কার্যকরী উপকার পাওয়া যায়।কেননা ব্যায়াম করার পর গোসল
করে নিলে আমাদের শরীর যেমন দ্রুত শীতল হয় তেমনিভাবে ক্লান্তি ভাবটাও
দ্রুত চলে যায়।
প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আমরা ব্যায়াম করার সঠিক সময় এবং ব্যায়াম করার পরে কি
করা উচিত তা নিয়ে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানিয়েছি। এখন আমরা আরও একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত সেই
সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলের নিম্নের অংশে আলোচনা করব।
সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে শরীর সুস্থ রাখতে শারীরিক কসরত বা শারীরিক পরিশ্রমের
বিকল্প নেই। কিন্তু প্রথমে জানতে হবে আমাদের কতটুকু ব্যায়াম করা
উচিত। সাধারণত এটি নির্ভর করে আমাদের শরীরের গঠন এর উপরে। ব্যায়াম
করার ক্ষেত্রে কতগুলো নিয়ম-নীতি রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে আপনার শারীরিক
ক্ষমতা, ফিটনেস এর লক্ষ্য, পছন্দ-অপছন্দ, ব্যায়াম করার
যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা এবং আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা। আর
এর পাশাপাশি আপনি ব্যায়াম করতে কতটুকু সময় দিতে পারবেন এর উপরে।
সাধারণত প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন ব্যায়াম করলে সবথেকে বেশি উপকার পাওয়া
যায়। এছাড়া আপনি চাইলে সপ্তাহের ৭ দিনই হালকা ব্যায়াম করতে
পারেন। কিন্তু আপনি যদি জিমে যান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ৪ থেকে পাঁচ
দিন জিমে যেতে হবে। যদি আপনি সপ্তাহের ২ কিংবা ৩ দিন জিমে যান
সেক্ষেত্রে তেমন কোনো ফলাফল পাবেন না। ম্যানস এর মতে, ব্যায়াম সাধারণত ৪৫
মিনিট থেকে ১ ঘন্টা হওয়া উচিত।প্রথম ১০ মিনিট ওয়ার্ম
আপ, পরবর্তী ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ওয়েট ট্রেনিং এবং শেষের ৫ থেকে ১০ মিনিট
কুল ডাউন এবং স্ট্রেচিং এর অন্তর্ভুক্ত। ‘
এছাড়াও ম্যানসের মতে, ‘ যেদিন ওয়েট লিফটিং বা ভার উত্তোলন করা
হয় তারপরের দিন বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এতে করে মাংসপেশি রিকভার করার
সময় পায়। আশা করছি আমাদের এই আলোচনা থেকে আপনি সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা
উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা । ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত
প্রথমেই বলে নেই ব্যায়াম করার ফলে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় এর ফলে ব্যায়াম
করার পর পরই ভারি কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। তবে সামান্য পানি কিংবা
প্রোটিন শেক খাওয়া যেতে পারে। আধা ঘন্টা পর হালকা খাবার যেমন ফলের রস
খাওয়া যায়। আর দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর ভারী খাবার খাওয়া
যায়।
এখন আপনি ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত
বা ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত সেই সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে নিম্নের আলোচনাটুকু মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ মোটা হওয়ার উপায় – মোটা হওয়ার ফর্মুলা
সাধারণত ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সমূহের মধ্যে প্রোটিন জাতীয়
খাবার খাওয়া উচিত। এতে মাসল বা পেশি গুলোর মধ্যে যে শক্তির ঘাটতি হয় তা
পূরণ হয়। আর যেহেতু পেশিতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ব্যায়াম করার ফলে ব্যয়
হয়। তাই ব্যায়াম করার পরে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে
তা সহজেই পূরণ হয়ে যায়।
মিষ্টি আলু
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সমূহের মধ্যে আপনি মিষ্টি আলুকে রাখতে
পারেন। কেননা এই মিষ্টি আলুতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম থাকে। এর
আরো একটি ভালো দিক হচ্ছে মিষ্টি আলু খেলে দ্রুত খিদা মিটে যায়। এর ফলে
আপনি এদিক থেকে লাভবান হচ্ছেন।
ওটস
ওটস এর মধ্যে থাকে কম্প্লেক্স কার্ব আর এই কমপ্লেক্স কার্ব শরীরের
ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়াও দেখা যায় যে, ওটসের ভেতরে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন “ই” থাকে। যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
বাদাম
ব্যায়াম করার পর শরীরে প্রচন্ড ক্লান্তি ভাব চলে আসে। আর এই ক্লান্তি
ভাবকে দ্রুত দূর করতে পারে বাদাম।কেননা বাদামে রয়েছে ফ্যাট, প্রোটিন,
ভিটামিন এবং মিনারেলের উপস্থিতি। তাই ব্যায়াম করার ফলে আপনার
শরীরে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে বাদাম সাহায্য করতে পারেন। কয়েক ধরনের বাদাম এর
উদাহরণ হলো- আমন্ড, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
শাকসবজি
ব্যায়াম করার পর আপনি পালংশাক এবং ব্রকোলি খেতে পারেন। আর এর
পাশাপাশি আপনি সিজনাল শাকসবজিও খেতে পারেন। কেননা শাক-সবজিতে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন “এ” ভিটামিন “সি” ভিটামিন “ই” এবং ভিটামিন “কে”
থাকে। পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য
খনিজ উপাদান এর উৎস হচ্ছে শাকসবজি। এর মধ্যে কোন প্রকারের ফ্যাট বা
চর্বি না থাকায় শাকসবজি শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
ফল
ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকা সমূহের মধ্যে মৌসুমী ফল খাওয়া ছাড়া অন্য
কোন বিকল্প পাওয়া কিছুটা দুষ্কর। তাই চেষ্টা করবেন প্রতিদিন
ব্যায়াম করার পর একটি মৌসুমী ফল খেয়ে নেওয়ার।এক্ষেত্রে আপনি আপনার খাদ্য
তালিকায় রাখতে পারেন আপেল, পেয়ারা, কলা, গাজর কিংবা টমেটোর মতো
ফল। এই ধরনের ফলে প্রচুর পরিমাণে “অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট” থাকে পাশাপাশি
ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানও প্রচুর পরিমাণে থাকে। তাই শরীরকে সুস্থ
রাখতে ব্যায়ামের পর ফল খাওয়া একটি ভালো অভ্যাস।
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো
যেসব মানুষ নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকে তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যায়াম সম্পর্কিত
বিষয়ে একটি কমন প্রশ্ন করে থাকে। সেটা হলো সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি
ভালো কিনা? তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে
আমরা সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো কিনা এই প্রশ্নের সুন্দর এবং সঠিক
ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া
যাক।
প্রথমেই বলে নেই আপনি যদি খালি পেটে ব্যায়াম করেন সেটি আপনার জন্য উপকারী হতে
পারেন।কেননা খালি পেটে ব্যায়াম করলে শক্তি ব্যয় হয় এবং প্রচুর ফ্যাট বার্ন
হয়। বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে সকালবেলা খালি পেটে ব্যায়াম করা অনেক
উপকারী। ব্রিটিশ একটি জার্নালের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, খালি পেটে
শরীরচর্চা করতে তেমন কোন অসুবিধা হয় না। তবে আপনি চাইলে সরাসরি
খালি পেটে ব্যায়াম না করে ব্যায়াম করার পূর্বে সামান্য পানি খেয়ে নিতে
পারেন।
তবে আপনি যদি একেবারেই খালি পেটে ব্যায়াম করতে গিয়ে শক্তি বা এনার্জি না পান
সেক্ষেত্রে আপনি একটি পাকা কলা বা আপেল খেয়ে ব্যায়াম করতে পারেন। এতে
ফলে উপস্থিত ফাইবার আপনার পেট ভরে রাখবে এবং ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত এর জন্য
শক্তি যোগাবে। ব্যায়াম করার সময় অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ার ফলে শরীর
থেকে পানি বের হয়ে যায়। এতে করে পিপাসা লাগার সম্ভাবনা
বাড়ে। কাজেই সাথে পানি রাখুন। পিপাসা অনুভব হলে মাঝে মাঝে এক চুমুক করে পানি খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ চিকন হওয়ার উপায় – চিকন হওয়ার ঔষধ
খালি পেটে ব্যায়াম করা ভাল কিনা এ বিষয়ের উপরিউক্ত আলোচনায় উল্লেখিত
তথ্যগুলো পাশাপাশি আরো কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা
প্রয়োজন। আর এই সমস্ত তথ্য শেয়ার করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রথমেই বলতে
হয় যে, প্রত্যেকটি বিষয়ের যেমন কিছু ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিকও
রয়েছে।আর সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করার বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম
নয়।
অর্থাৎ, সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে
তেমনি এর পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যদিও এই সমস্ত অপকারিতা গুলো
কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তা
সত্ত্বেও আপনাদেরকে অবহিত করার জন্য আমরা নিম্নে খালি পেটে ব্যায়াম করার
উপকারিতা এবং অপকারিতা সমূহ তুলে ধরেছি। প্রথমে আমরা খালি পেটে ব্যায়াম করার
উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার উপকারিতা
সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করলে আমরা যেই দিক থেকে সবথেকে বেশি উপকৃত হয়ে
থাকি সেটা হলো দ্রুত আমাদের শারীরিক ওজন কমানো। অর্থাৎ, সকাল বেলায় খালি
পেটে ব্যায়াম করা হলে এটা খুব দ্রুত আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে
থাকে। কেননা খালি পেটে ব্যায়াম করলে শরীরের ভেতরে থাকা ফ্যাট গুলো খুব সহজেই
বার্ন হতে পারে যার ফলশ্রুতিতে দ্রুত আমাদের শরীরের ওজন কমে যেতে থাকে।
এছাড়াও সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার ফলে আমাদের শরীরের পেশি গুলো
শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং আমাদেরকে ভেতর থেকে শারীরিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করে
থাকে। এর পাশাপাশি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নিয়মিত খালি পেটে
ব্যায়াম করে থাকেন তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কিছুটা
বেশি থাকে এবং শরীরের সব অঙ্গ-প্রতঙ্গ তাদের নির্ধারিত নিয়মে সুষ্ঠ ভাবে কাজ
করতে সক্ষম হয়।
সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার অপকারিতা
ইতিমধ্যেই আমরা সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার উপকারিতা সম্পর্কে
জেনেছি। এবার আমরা আমাদের আলোচনার এই অংশে সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার
অপকারিতা গুলো জেনে নিব।সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার সবথেকে বড়
অপকারিতা হলো এটা আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেট করে ফেলে। যার ফলে বিভিন্ন
ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও খালি পেটে ব্যায়াম করার
অন্যান্য অপকারিতা গুলো হলোঃ
- বমি বমি ভাব অনুভূত হওয়া কিংবা বমি হওয়া।
- নার্ভাস বোধ করা।
- শরীরের মাংসপেশিগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়া ইত্যাদি।
সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার উপরিউক্ত অপকারিতা গুলো আপনি যদি প্রতিরোধ
করতে চান তবে সেক্ষেত্রে বিকল্প পথ হিসেবে আপনি প্রতিদিন সকাল বেলায় হালকা
কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার পর ব্যায়াম করতে পারেন অথবা বাদাম
শেক কিংবা মিল্ক শেক পান করার পর ব্যায়াম করতে পারেন। আর এই কাজগুলো করার
মাধ্যমে আপনি সকাল বেলায় খালি পেটে ব্যায়াম করার উপরিউক্ত অপকারিতা গুলোকে
সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবেন।
সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত
প্রিয় পাঠক আশা করছে এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, সকাল বেলায়
খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো কিনা। আর এই বিষয়টি জানার পর এখন যদি
আপনি সকালবেলায় ব্যায়াম করার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে এখন আপনার আরেকটি
নতুন বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত। আর এই বিষয়টি হলো আপনার জন্য সকালে কি
কি ব্যায়াম করা উচিত হবে বা সকাল বেলায় কি কি ব্যায়াম করলে আপনি
শারীরিক ভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন এবং ব্যায়াম করার বিভিন্ন উপকারিতা
ভোগ করতে পারবেন।
যেহেতু ব্যায়াম করার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই এবং আপনি আপনার সুবিধামতো
যেকোনো সময়ে নিয়মমাফিক ব্যায়াম করে ব্যায়াম করার সুবিধা গুলো ভোগ করতে
পারেন। তাই অনেকেই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সকালের সময়টিকে বেছে
নেয়। কেননা বেশিরভাগ কর্মব্যস্ত মানুষ সকালের সময়টুকুতেই ফ্রি
থাকেন। তাই তারা তাদের দৈনিক ব্যায়াম করার প্রসঙ্গে সকাল বেলায় ব্যায়াম
করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখন প্রশ্ন হলো আপনার শারীরিক
সুস্থতার জন্য সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত? এই প্রসঙ্গে বলতে নিলে আমরা
সহজ ভাষায় বলতে পারি যে, সকাল বেলায় আপনার জন্য “কার্ডিও” ব্যায়াম গুলো করা
সবথেকে বেশি ফলপ্রসূ।
এখন “কার্ডিও” ব্যায়াম বলতে আসলে কি বোঝায় সেই বিষয়টি আপনাদের সুবিধার্থে
কিছুটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। “কার্ডিও” ব্যায়াম বলতে সাধারণত হাঁটা,
সাইক্লিং করা, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো ইত্যাদি ব্যায়ামগুলোকে বোঝায়। তাই
আপনি যদি প্রতিদিন সকাল বেলায় ব্যায়াম করার মাধ্যমে নিজেকে ফিট রাখতে চান
তাহলে এই ধরনের “কার্ডিও” ব্যায়াম গুলো করে সহজেই নিজেকে শারীরিক দিক থেকে ফিট
রাখতে পারবেন এবং সেই সঙ্গে নিজের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার
মাধ্যমে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন।
সকালে ব্যায়াম করার সুবিধা কি
কথায় আছে সকাল বেলার ব্যায়াম শরীরে উন্নতি আনে। তাই শরীরকে সুস্থ
এবং ফিট রাখতে সকালের ব্যায়াম অনেক উপকারী। তবে সকালে ব্যায়াম করতে
গেলে প্রথমের দিকে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হলেও একবার অভ্যাস হয়ে গেলে তা
অনেকটা সহজ হয়ে যায়। সকালে ব্যায়াম করার সুবিধা কি রয়েছে চলুন
সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
পেশি শক্তিশালী করতে
সকালে ব্যায়াম করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। শরীরে সকালে টেস্টোস্টেরন
হরমোনের মাত্রা বেশি থাকে। কাজেই সকালে যদি ব্যায়াম করা হয় তবে
সেক্ষেত্রে পেশি শক্তিশালী হয়। তাই যাদের পেশির দুর্বলতা রয়েছে তারা
প্রতিদিন সকালে নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন।
স্ট্রেস কমানোর ক্ষেত্রে
বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে স্ট্রেসের পরিমাণ বেড়ে
যাচ্ছে। স্ট্রেসের কারণে অনেকেই তার কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে
পারেনা। স্ট্রেস থেকে বাঁচার জন্য সকাল বেলার ব্যায়াম অনেক উপকারী।
কেননা সকালের ব্যায়াম মানুষের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ
রাখে।
ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে
প্রতিদিনের ব্যায়াম আপনার শরীরের মধ্যে ক্লান্তি ভাব নিয়ে
আসে। এতে করে আপনি রাতে যেমন খুব দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে পারবেন
তেমনি ভাবে সকালে খুব দ্রুত ঘুম থেকে উঠতেও পারবেন। বিশেষ করে
যারা অনিদ্রাজনিত রোগে ভোগে তাদের জন্য সকালবেলার ব্যায়াম খুবই
উপকারী।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে
যাদের ডায়াবেটিস জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সকালের ব্যায়াম খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তাররাও নির্দেশনা দিয়ে থাকেন সকালে ব্যায়াম করার
জন্য। সকালে ব্যায়াম এর মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর
রক্তের শর্করা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই বলা যায়
যে, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সকাল বেলার ব্যায়াম অত্যন্ত কার্যকরী।
ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত – ব্যায়াম করার পর খাবার তালিকাঃ শেষ
কথা
সম্মানিত পাঠক আমরা আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে ব্যায়াম করার সঠিক
সময়, ব্যায়াম করার পর কি করা উচিত, সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত, ব্যায়াম
করার পর খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত, ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত, সকালে
খালি পেটে ব্যায়াম করা কি ভালো কিনা, সকালে কি কি ব্যায়াম করা উচিত, সকালে
ব্যায়াম করার সুবিধা কি ইত্যাদি বিষয়াবলী সম্পর্কে স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট
ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে এবং এই আর্টিকেলটি
পড়ার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। তাহলে আমাদের আজকের আলোচনার পর্ব এখানেই
শেষ করছি।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং পরবর্তীতেও এই রকম নতুন
নতুন আর্টিকেল পড়তে এবং নতুন কিছু জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট
করবেন। ধন্যবাদ।