|

গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা – গর্ভবতী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৬ টি খাবার তালিকা

 গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী ছয়টি খাবার নিয়ে আজ আমরা আমাদের এই
আর্টিকেলে আলোচনা করব। কারণ গর্ভকালীন সময়ে সঠিক খাবার মা এবং শিশুকে অনেকগুলো
রোগব্যাধি এবং বিভিন্ন রকমের সমস্যা থেকে নিরাপদ রাখে। এরমধ্যে শিশুর জন্মগত
ত্রুটি হওয়া,শিশুর ওজন স্বাভাবিক এর চেয়ে কম হওয়া আবার অনেক সময় দেখা যায় যে
সন্তান সময়ের আগেই জন্ম নেয় ।এইসব সমস্যা সম্ভাবনা কমাই সঠিক খাবার ও
লাইফস্টাইল। 

০১/ কোলিন সমৃদ্ধ খাবার


প্রথমে যে খাবারটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হলো ডিম। গর্ভে শিশুর যে ব্রেইন বা
মস্তিষ্ক তৈরি হচ্ছে এই ব্রেন যাতে ভালোভাবে তৈরি হয় সেজন্য কোলিন নামে একটি
পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন। করলেন আমাদের খাবার থেকে নিতে হয়। কারণ মাল্টিভিটামিন
ট্যাবলেট গুলোতে সাধারণত কোলিন থাকে না। আর ডিম হলো কোলিনের খুব ভালো একটি উৎস
। 

কোলিন ছাড়া ও ডিমের অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। টিমে এত ধরনের ভিটামিন
মিনারেল পাওয়া যায় যে গবেষকরা এটাকে অনেক সময় বলে নেসার্স মাল্টিভিটামিন।
অর্থাৎ প্রকৃতির দেয়া মাল্টিভিটামিন। ডিম খাওয়ার সময় একটি জিনিস অবশ্যই ভালো
করে খেয়াল রাখতে হবে আর সেটি হল গর্ভকালীন সময়ে কাঁচা ডিম আছে এরকম কোন খাবার
খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

যে খাবারগুলোতে কাঁচা ডিম আছে সেই খাবারগুলো সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হবে আর
ডিম খাওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন যাতে টিমটা ভালোভাবে রান্না হয় ভালোভাবে রান্না
না হলে সেখান থেকে ক্ষতি করবে শরীরে প্রবেশ করে ডিমের কুসুম এবং সাদা অংশ যাতে
ভালোভাবে সিদ্ধ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ডিম ছাড়াও বিভিন্ন খাবারে পাওয়া
যায় আর সেগুলো হলো গরুর মাংস মুরগির মাংস দুধ এইসবে তো পাওয়া যায় এই খাবারগুলো
পরিমান মত আপনার খাবার তালিকায় রাখা উচিত 

০২/ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা

দুই নম্বরে বলবো ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার তালিকা গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম দুইটা
কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রথম কারণটা হলো গর্ভের শিশুর হাড় মজবুত করার জন্য দাঁত
শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম দরকার আর দ্বিতীয় কারণটা হলো মায়ের ব্লাড প্রেসার
স্বাভাবিক রাখার জন্য যাদের আগে কখনোই ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ে সমস্যা
হয়নি প্রেগনেন্সি তে দেখা যায় এমন অনেকের ব্লাড পেশার বেড়ে যায়। এবং কিছু
জটিল রোগ দেখা দেয় যেমন pre-eclampsia , eclampsia নামের রোগ ।

 এইসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে তাহলে
মা এবং শিশু সুস্থ থাকবে। খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস দুধ।
কতটুকু দুধ খা প্রয়োজন গবেষণা থেকে দেখা যায় যে প্রতিদিন তিন কাপ পরিমাণ দুধ
খাওয়া প্রয়োজন। দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন টক দই খেতে পারেন। মিষ্টি দইয়ের
চেয়ে টক দই বেশি স্বাস্থ্যকর। 

অনেকের দেখা যায় যে দুধ খেলে একটু হজমের সমস্যা হয়। এরকম হলে অন্য সব খাবার
থেকে ক্যালসিয়াম নিতে হবে ।যেমন শাক, ব্রকলি ,কাঠ বাদাম এসব থেকে ক্যালসিয়াম
পাওয়া যায়। খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না পেলে অবশ্যই ডাক্তারের
কাছ থেকে পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে ক্যালসিয়াম এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে
প্রথম তিন মাস শেষ হওয়ার পর চতুর্থ মাস থেকে আলাদা করে ক্যালসিয়াম খেতে বলেন
ডাক্তাররা। 

০৩/ গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার পরামর্শ

আমাদের তালিকা তিন নাম্বার খাবার হল শাক। গর্ভাবস্থায় শাক খাওয়ার পরামর্শ
দেওয়া হয় অনেক কারণে। আজ আমরা এখানে দুইটি কারণ আলোচনা করব শাকে ভালো পরিমান
ফোলেট ও আইরন থাকে। মায়ের গর্ভ অবস্থায় থাকার সময় শিশুর যে ব্রেন তৈরি হয়
মেরুদণ্ড তৈরি হয় শিরদাঁড়া তৈরি হয় এসব ভালোভাবে তৈরি হওয়ার জন্য ফোলেট দরকার
হয়। ফোলেট এর অভাব হলে শিশুর বিভিন্ন রকমের সমস্যা হয়। 

ফোলেট এতটাই গুরুত্ব পূর্ণ যে ডাক্তাররা এর অভাব পূরণের জন্য  ফলিক এসিড
ট্যাবলেট খেতে বলে। আর মায়ের শরীরে নতুন রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন খেতে বলে।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে মায়ের শরীরে রক্ত শূন্যতা দেখা দিতে পারে, শিশুর ওজন কম
হয়। সময়ের আগেই প্রসব হয়ে যেতে পারে। আর এজন্য নিয়মিত শাক খেতে হবে। 

০৪/ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া কেন প্রয়োজন শিশুর
দাঁত, দাঁতের মাড়ি এসব তৈরিতে সাহায্য করে ভিটামিন সি মজবুত হাড় তৈরি করতে
সহযোগিতা করে ভিটামিন সি। আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমিয়ে রাখতে পারেনা আর এজন্য
প্রতিদিন ভিটামিন সি আছে এমন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন ।

 অনেকে মনে করে যে টক জাতীয় খাবার থেকে শুধু ভিটামিন সি পাওয়া যায় টক
জাতীয় খাবার ছাড়াও বিভিন্ন রকমের খাবার থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায় এখানে কিছু
নাম উল্লেখ করা হলো টমেটো ফুলকপি বাঁধাকপি ক্যাপসিকাম ব্রকলি কাকরোল করলা এগুলোই।
আর টক জাতীয় সকল রকমের ফল থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 

০৫/ গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রোটিন

গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। প্রোটিন
মা এবং শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক হয়। এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং
উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে শিশুর মস্তিষ্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ
অঙ্গের বিকাশের জন্য।

গর্ভাবস্থায় প্রোটিনের উপকারিতা:

  1. শিশুর বৃদ্ধি: প্রোটিন শিশুর কোষ ও টিস্যুর বৃদ্ধি এবং বিকাশে
    সহায়ক।
  2. মায়ের শক্তি বজায় রাখা: প্রোটিন মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয়
    শক্তি যোগাতে সহায়তা করে।
  3. ইমিউন সিস্টেম উন্নতি: প্রোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
    করে, যা মাকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

কোন খাবারে প্রোটিন পাওয়া যায়:

  1. ডিম: ডিম প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস।
  2. মুরগির মাংস: মুরগির মাংস থেকে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন পাওয়া
    যায়।
  3. মাছ: বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-৩
    ফ্যাটি অ্যাসিডেরও ভালো উৎস।
  4. ডাল ও শিম: শাকসবজি ও মসুর ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস।
  5. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে
    প্রোটিন থাকে।
  6. বাদাম ও বীজ: বাদাম এবং বীজ, যেমন বাদাম, আখরোট, চিয়া বীজ
    ইত্যাদিতে প্রোটিন থাকে।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য ও শিশুর সঠিক
বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, প্রোটিনের পরিমাণ এবং উৎস সম্পর্কে কোনো
প্রশ্ন থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

০৬/ গর্ভবতী মেয়েদের নাস্তা

গর্ভবতী মেয়েদের নাস্তার সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত যা পুষ্টিকর, হালকা, এবং
শক্তি প্রদানকারী। নাস্তা সারাদিনের শক্তি বজায় রাখতে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ
করতে সহায়ক। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর নাস্তার বিকল্প দেওয়া হলো যা গর্ভাবস্থায়
খাওয়া যেতে পারে:

স্বাস্থ্যকর নাস্তার বিকল্প:

  1. ফল এবং বাদাম: তাজা ফল, যেমন আপেল, কলা, বেরি, পেয়ারা,
    পেয়ারা, এবং অল্প পরিমাণে বাদাম, যেমন আখরোট, কাজু, বা আমন্ড। এইগুলোতে
    প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল, এবং ফাইবার রয়েছে।

  2. দই ও ফল: প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ দইয়ের সাথে তাজা
    ফল মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি প্রোটিন এবং প্রোবায়োটিক্সে ভরপুর, যা হজমে
    সহায়ক।

  3. পুরি বা পরোটা: পুরো গমের পরোটা বা পুরি, সাথে সামান্য দই
    বা সবজি। এটি একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর বিকল্প।

  4. উপমা বা পোহা: এইসব হালকা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারগুলি খুব
    পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য। এগুলিতে সবজি মিশিয়ে নিলে পুষ্টির মান বাড়ে।

  5. অমলেট বা সিদ্ধ ডিম: ডিম প্রোটিনে ভরপুর এবং সহজে তৈরি করা
    যায়। সকালে বা দুপুরে একটি সিদ্ধ ডিম বা সবজি দিয়ে তৈরি অমলেট একটি
    পুষ্টিকর নাস্তা হতে পারে।

  6. ওটমিল: ওটমিল হোল গ্রেইন এবং ফাইবারের ভালো উৎস। এতে দুধ
    এবং ফল যোগ করে খেলে এটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম নাস্তা হিসেবে কাজ করবে।

  7. স্মুদি: বিভিন্ন ফল, সবজি, দই, এবং সামান্য মধু মিশিয়ে
    একটি স্মুদি তৈরি করা যেতে পারে। এটি পুষ্টিতে ভরপুর এবং সহজে খাওয়া যায়।

  8. মুরমুরা বা চিড়ার মুড়ি: এতে শাকসবজি, বাদাম এবং সামান্য
    মশলা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি হালকা এবং সহজপাচ্য।

  9. দুধ এবং শাকসবজি: এক গ্লাস দুধ এবং কিছু কাঁচা বা হালকা
    সিদ্ধ শাকসবজি, যেমন গাজর, শশা, বা টমেটো, একটি পুষ্টিকর বিকল্প হতে পারে।

মনে রাখবেন:

  • গর্ভাবস্থায় দিনে ছোট ছোট নাস্তার অংশে খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীরে
    প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা যায় এবং অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগার ঝুঁকি কমে।
  • প্রোটিন, ফাইবার, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের সমন্বয় খাবারের মধ্যে রাখার চেষ্টা
    করুন, যাতে নাস্তা পুষ্টিকর এবং সুষম হয়।
  • খুব বেশি মশলাদার বা তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি হজমে সমস্যা
    করতে পারে।

সবসময় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর নাস্তা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং সন্দেহ হলে
ডাক্তারের পরামর্শ নিন।