মসজিদে দান করার হাদিস – মসজিদে দান করার ফজিলত

প্রিয় পাঠক আপনি কি মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে
জানতে চাচ্ছেন? যদি জানতে চান তাহলে আপনি একদম ঠিক জায়গায়
এসেছেন। কেননা এই পোস্টের মধ্যে আমরা মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান
করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুতরাং, আপনি যদি মসজিদে দান
করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চান তাহলে
সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।

মসজিদে দান করার হাদিস - মসজিদে দান করার ফজিলত

এছাড়াও আমরা আমাদের এই পোস্টের মধ্যে দানের ফজিলত ও ঘটনা এবং মসজিদে দান
করার ঘটনা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী সুন্দরভাবে উপস্থাপন
করেছি। তাহলে আর দেরি কেন! ঝটপট এই পোস্টটি পড়া শুরু করে দিন এবং
মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ মসজিদে দান করার হাদিস – মসজিদে দান করার ফজিলত

মসজিদে দান করার হাদিস – মসজিদে দান করার ফজিলতঃ ভূমিকা 

প্রতিটি মুসলিমের জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র, প্রিয় এবং মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের
স্থান হলো মসজিদ। কেননা মসজিদ হলো এমন একটি জায়গা যেখানে আমরা দৈনিক পাঁচ
ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করি, সিজদার
মাধ্যমে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটে চলে যায় এবং আল্লাহর কাছে মাথা নত করি। এছাড়াও
হাদিসের বর্ণনায় উল্লেখিত রয়েছে যে-  “একজন ব্যক্তি সালাত আদায় করতে গিয়ে
যখন মাথা নত করে সিজদাহ দেয় তখন আল্লাহ পাক ওই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে বেশি খুশি
হয় বা সন্তুষ্ট হয়”। 

মসজিদে গিয়ে আমরা যে শুধু মাত্র সালাতই আদায় করি তা নয়। এর পাশাপাশি আমরা
কোরআন-হাদিস এবং দ্বীনি শিক্ষাও লাভ করতে পারি মসজিদে গিয়ে। আর তাইতো
সাধারণ দান-সাদকার তুলনায় মসজিদে দান করার ফজিলত অপরিসীম। মসজিদে দান করার
হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়
বিভিন্ন রকমের তথ্য উঠে এসেছে। যার মধ্যে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে দান
করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে আজকে আমরা আমাদের এই পোস্টের
মধ্যে আলোচনা করব। 

সুতরাং, মনোযোগ না হারিয়ে বা অন্য কোথাও না গিয়ে সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে আমাদের
এই পোস্টটি পড়তে থাকুন। তাহলেই আপনি মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার
ফজিলত সহ আরো অনেক বিষয়ে সবিস্তারে জানতে সক্ষম হবেন। তাহলে চলুন
শুরুতেই দানের ফজিলত ও ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

দানের ফজিলত ও ঘটনা

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। তিনি
তাঁর জীবনদশায় অনেক দান-সাদকা করে গেছেন এবং উনার বর্ণিত দানের ফজিলত ও ঘটনা
দ্বারা আমাদেরকে দান করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। রাসূল (সাঃ) দানের ফজিলত
সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন যে- 
“একজন মানুষের মৃত্যু হলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ৩টি আমল এমন রয়েছে
যা কোনো ব্যক্তির মৃত্যুতেও বন্ধ হয় না। বরং কেয়ামত অব্দি চলতে
থাকে”।

আর এই ৩টি আমল হলোঃ

  • দান-সাদকা করা বা সাদকায়ে জারিয়া।
  • দুনিয়াতে নেককার সন্তান রেখে যাওয়া যারা মৃত্যুর পর ওই ব্যক্তির জন্য
    দোয়া করবে এবং
  • কাউকে উপকারী জ্ঞান দান করা।

এখানে সাদকায়ে জারিয়া বলতে মূলত কি বোঝায় সেটা আপনাদের সুবিধার্থে কিছুটা বর্ণনা
করা প্রয়োজন। সাদকায়ে জারিয়া বলতে মূলত এমন ধরনের দানের কথা
বোঝায় যে দানের সওয়াব একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরেও কিয়ামত অব্দি
পেতে থাকে। অর্থাৎ, যে দানের সওয়াব স্থায়ীভাবে লাভ করা যায় সেটাকেই
সাদকায়ে জারিয়া বলে। আর এই রকম সাদকায়ে জারিয়ার উদাহরণ হলোঃ

  • মসজিদ নির্মাণে দান করা।
  • মাদ্রাসা নির্মাণে দান করা।
  • দুনিয়ায় নেককার সন্তান রেখে যাওয়া।
  • কাউকে দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া বা হাফেজ-আলেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে শিক্ষা দেওয়া
    ইত্যাদি।

সুতরাং, বুঝতেই পারছেন দানের ফজিলত কতটা বিস্তৃত। এছাড়াও রাসূল
(সাঃ) বলেছেন-
“যেই ব্যক্তি অন্যদের কুরআন-হাদিস এবং দ্বীনি শিক্ষা দান করে সেই
ব্যক্তিই সবচেয়ে বড় দানশীল”
।আমরা যখন দান করে থাকি তখন আমাদের মধ্যে অনেকেই ভেবে থাকেন যে, দান করে
আমরা গরীব-দুঃখীদের প্রতি দয়া করছি। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টা মোটেও এমন
নয়। অর্থাৎ, ইসলামী শরীয়তের মতে দান হলো ধনীদের সম্পদের ওপর গরিবদের
অধিকার। 

আর এই বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ সূরা যারিয়াত এর ১৯ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা
হয়েছে যে-
“তোমাদের সম্পর্কের উপর গরীব অসহায়দের অধিকার রয়েছে”। এছাড়াও
দানের ফজিলত সম্পর্কে সূরা আল বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা
বলেছেন-
“যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মতো, যা
থেকে ৭টি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে ১ শতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে
ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন”

দানের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেছেন-
“দান-সদকা মানুষের গুনাহ গুলোকে এমন ভাবে মিশিয়ে ফেলে যেভাবে পানি
আগুন্কে নিভিয়ে দেয়”
। এছাড়াও দানের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করতে বুখারী শরীফে উল্লেখিত
রয়েছে- 
“যে ব্যক্তি গোপনে আল্লাহর রাস্তায় দান করবে সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন
আল্লাহর আরশের নিচে ছায়ায় থাকবে এবং শান্তিতে থাকবে”

আরো পড়ুনঃ নবী (সাঃ) কতবার হজ্জ করেছেন

দান করার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যেকোন ধরনের দুর্ঘটনা, অসুস্থতা এবং মানসিক
দুশ্চিন্তা থেকে সহজেই সুরক্ষিত থাকতে পারে। দানের গুরুত্ব এবং ফজিলত এতটাই
বেশি যে, রাসূল (সাঃ) আমাদেরকে দান করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বলেছেন যে-
“তোমরা খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা
কর”
। এতক্ষণ পর্যন্ত আমরা দানের ফজিলত সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত
জানিয়েছি। এবার চলুন দানের ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেই।

দানের ঘটনা সম্পর্কিত বর্ণনা হিসেবে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে- “হযরত আনাস
(রা.) থেকে বর্ণিত, একদা এক জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-এর কাছে আসলো। তখন রাসূল
(সাঃ) সেই ব্যক্তিকে এতো বেশি ছাগল দিলেন, যাতে ২ উপত্যকার মাঝামাঝি স্থান
পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর ওই ব্যক্তি তার গোত্রের কাছে গিয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে
বললো, হে আমার জাতি ভাইয়েরা, তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করো। কেননা রাসূল (সাঃ) তার
অভাবের আশঙ্কা না করেই অনবরত দান করতেই থাকেন”। (মুসলিম হাদিস : হাদিস নং
৫৯১৪)। 

প্রিয় পাঠক আশা করছি এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনি দানের ফজিলত ও ঘটনা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এবার তাহলে চলুন মসজিদে দান করার ঘটনা এবং মসজিদে
দান করার হাদিস সম্পর্কে পর্যায়ক্রমিকভাবে জেনে নেই।

মসজিদে দান করার ঘটনা

মসজিদে দান করা বা মসজিদ নির্মাণের সাহায্য করা একটি বড় মাপের ইবাদত এবং
একটি বড় মাপের সওয়াবের কাজ। কেননা মানুষ মারা যাওয়ার পরপরই তার সব ধরনের
আমলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মসজিদে দান করার মাধ্যমে মানুষ যেসব
সওয়াব অর্জন করে তা তার মৃত্যুর পরেও কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকে। যে মসজিদে আমরা
আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করব আল্লাহকে সেজদা করব এবং যে স্থানে নামাজ কায়েম করা হয়
কিংবা নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেই মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করা নিঃসন্দেহে
একটি মহৎ কাজ। 

আমাদের পরবর্তী আলোচনা মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত উভয়
জায়গাতে আমরা অনেকগুলো বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। উক্ত আলোচনায় যাওয়ার
পূর্বে চলুন আমরা মসজিদে দান করার ঘটনা সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত ভাবে জানার
চেষ্টা করি। 

কোরআন পাকে উল্লেখ রয়েছে,
“যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উদাহরণ একটি শস্য বীজের
মতো, যা ৭টি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা থাকে। আর তার
মধ্যে থেকে আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। কেননা
আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র প্রাচুর্যময় এবং সর্বজ্ঞ”
। [সূরা বাকার: আয়াত ২৬১]

সুরা বাকারা এর উক্ত আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় দান
করা কতটা উত্তম।নিজেদের ধন-সম্পত্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করাকে
সাদকাহ্ বলে। আর এই সদকা কেবলমাত্র বান্দার অর্থনৈতিক উৎস থেকে দান করা সম্ভব।
বিভিন্ন সময় আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম আমাদেরকে
দান করতে উৎসাহিত করেছিলেন। 

আরো পড়ুনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাসন আমল – হযরত ওমর রাঃ এর মৃত্যু

জায়েদ ইবনে আসলাম (রাহ.) তার পিতা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে- তিনি হযরত উমর
(রা.)-কে বলতে শুনেছেন রাসুল (সা.) (তাবুকের যুদ্ধের সময়) আমাদেরকে
দান-সাদকা করার নির্দেশনা দেন । সৌভাগ্যক্রমে ওই সময় আমার কাছে সম্পদও ছিল। আমি
(মনে মনে) বললাম, যদি আমি দান-সদকায় কোন দিন আবু বকর (রা.)-কে অতিক্রম করে যেতে
পারি, তাহলে আজই সেই সুযোগ। হযরত উমর (রা.) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে
আসলাম। 

তখন রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন- তুমি তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি
রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বকর (রা.) তাঁর পুরো সম্পদ নিয়ে এলেন।
তিনি বললেন, হে আবু বকর! তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি রেখে এসেছ? তিনি
বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, আমি
কখনও আবু বাকর (রা.)-কে অতিক্রম করতে পারব না। (তিরমিজি, হাদিস নংঃ ৩৬৭৫)

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন।ওই বছরেই মসজিদে নববীর নির্মাণ
কাজ শুরু করা হয়। ৬২৩ হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে মসজিদে নববীর কাজ সমাপ্ত
হয়। নবী (সা:) ৯২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর প্রথম যে জায়গায় বসে
পড়েছিলেন, সে জায়গাতেই মসজিদে নববী নির্মাণ শুরু করা হয়। মসজিদে নববী যে
জায়গায় নির্মাণ করা হয় তা দুইজনের এতিমের মালিকানাধীন ছিল আবু বক্কর (রা;) তা
কিনে নেন এবং ইসলামের রাস্তায় সদকা করে দেন। আশা করছি আপনারা এতক্ষণে মসজিদে দান করার ঘটনা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে
পেরেছেন।

মসজিদে দান করার হাদিস

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “মসজিদ আল্লাহর ঘর”। (সুরা জিন আয়াতঃ
১৮)

উপরের হাদীসটি দ্বারা আমরা  বুঝতে পারি যে, মসজিদ আল্লাহ তা’আলার কাছে কতটা
গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সকল মুসলমানদের জন্য মসজিদ একটি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ
স্থান। এই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে পরিচালনা এবং মেরামত বা নির্মাণের
জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। আর প্রায় সব পরিচালনা খরচ, মেরামত অথবা
নির্মাণের জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা মূলত মসজিদে মুসল্লিদের দান থেকেই
সংগ্রহ করা হয়।মসজিদের দান সংক্রান্ত  অনেক সহি হাদিস ও কোরআন পাকে
অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে। আমরা এখন মসজিদে দান করার হাদিস সম্পর্কে আলোচনা
করব। 

মসজিদে দান করার হাদিস গুলোর মধ্যে একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
” আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম জায়গা মসজিদ, আর নিকৃষ্ট জায়গা বাজার”। উক্ত
আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ তা’আলার কাছে কোন বান্দা যদি নৈকট্য পেতে চায়
তাহলে সে যেন বেশি বেশি মসজিদে অবস্থান করে। এবং প্রয়োজন ছাড়া বাজারে যেন
যাতায়াত না করে।  

মসজিদে দান করার হাদিস এর ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই ওসাল্লাম বলেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর
নির্মাণ করবেন”
। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নংঃ ১২১৮ এবং  শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নংঃ
২৯৩৯)

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লাম,
“পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার
নির্দেশ দিয়েছেন”
। (আবু দাউদ হাদিস নংঃ ৪৫৫)

আরো পড়ুনঃ হযরত ফাতেমা রাঃ এর জীবনী

মসজিদে দান করার হাদিস অর্থাৎ মসজিদে দানের মধ্যে রয়েছে মসজিদ নির্মাণের সময়
অর্থ দান করা, ইট, সিমেন্ট, বালু, শারীরিক পরিশ্রম কিংবা মিস্ত্রি খরচ, এসি,
ফ্যান, লাই্ট, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদির জন্য খরচ করা।আমরা এক কথায়
ব্যাপারটাকে এইভাবে বলতে যে, পারি মসজিদ পরিচালনা করার জন্য যে আনুষঙ্গিক
খরচ হয় তার একটা অংশ কিংবা পুরোটাই বহন করাকে মসজিদে দান করা বোঝায়। 

রাসুল (সাঃ)-এর একজন বিশিষ্ট সাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন- হুযুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার আমল নামায় যা থেকে নেকি যোগ হবে তা হলো,
যদি সে শিক্ষা অর্জনের পর তা অপরকে শিক্ষা দেয় ও প্রচার করে, অথবা সৎ সন্তান
রেখে যায়, অথবা ভালো বই রেখে যায়, অথবা মসজিদ নির্মাণ করে, অথবা মুসাফিরের
জন্য মেহমান খানা নির্মাণ করে যায়, অথবা নদী খনন করে যায়।”

(ইবনে মাজাঃ ২৪২)

অর্থাৎ, এই বর্ণনাটুকু থেকেও আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, মসজিদ নির্মাণ করে
গেলে কিংবা এটি নির্মাণে সহায়তা করলে একজন ব্যক্তি জন্য তার মৃত্যুর পরও
সওয়াব পেতে থাকা সম্ভব। আমাদের উপরের আলোচনা থেকে আশা করছি আপনি মসজিদে দান করার
হাদিস এর ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।এখন আমরা আমাদের পরবর্তী আলোচনা
মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

মসজিদে দান করার ফজিলত

মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর এবং মুসল্লিদের ইবাদতের স্থান। তাই মসজিদ নিঃসন্দেহে একটি
উত্তম এবং পবিত্র স্থান। আর এই উত্তম এবং পবিত্র স্থানটির নির্মাণ কাজে
সাহায্য করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসজিদ নির্মাণের জন্য যা দান
করা হয় তাকে সাদকায়ে জারিয়া বলা হয়। অর্থাৎ, আপনার অর্থ দ্বারা যে মসজিদ
নির্মিত হবে সেই মসজিদে যতদিন মুসল্লিরা নামাজ আদায় করবে, রোজার সময় ইফতার
করবে, সেহরি করবে কিংবা নফল ইবাদত করবে তার সব গুলো ইবাদতের কাজের একটা অংশ
আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে। 

অর্থাৎ, সাদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে আপনি যে সওয়াবের অংশীদার হবেন তা কেয়ামত
পর্যন্ত চলতে থাকবে।এবং আপনি মারা যাওয়ার পরেও আপনার আমলনামায় তা যুক্ত
হতে থাকবে। দানের নিয়ত যদি সঠিক থাকে এবং এখলাসের সাথে সওয়াবের নিয়তে আল্লাহর
রাস্তায় দান করা হয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা ১ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকার সমান
সওয়াব আমলনামায় যুক্ত করেন। আর রমজান মাসে তো এইসব সওয়াবের পরিমাণ আরো
বেড়ে যায়। 

আল্লাহ তা’আলা তখন যে কোনো ব্যক্তির সওয়াবকে ৭০ গুণ পরিমাণ বৃদ্ধি করে
থাকেন। আর এই কথাটির অর্থ হচ্ছে, মসজিদ নির্মাণের কাজে কিংবা মসজিদ
পরিচালনার কাজে অথবা যেকোনো নেক নিয়তে কোন টাকা-পয়সা বা সম্পদ দান
করলে আল্লাহ তায়ালা এক টাকার পরিবর্তে ৭০ টাকার সমান সওয়াব আমলনামায়
যুক্ত করেন। 

আমরা উপরের আলোচনা থেকে মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আল্লাহ
তায়ালা আমাদের মসজিদে দান করার ফজিলত এর উপর আমল করার তৌফিক দান করুক।(আমিন)।
আমরা আমাদের আলোচনার একদম শেষ অংশে চলে এসেছি। চলুন তাহলে আলোচনার শেষ
অংশটুকু সম্পর্কে জেনে নেই।

মসজিদে দান করার হাদিস – মসজিদে দান করার ফজিলতঃ শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক আমরা আমাদের এই পোস্টের মধ্যে দানের ফজিলত ও ঘটনা, মসজিদে দান করার
ঘটনা, মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার ফজিলত সম্পর্কিত যাবতীয়
বিষয় গুলো আপনাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি
আমাদের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি মসজিদে দান করার হাদিস এবং মসজিদে দান করার
ফজিলত সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে পেরেছেন। 

আপনি যদি পরবর্তীতেও এই রকম নতুন নতুন তথ্য সম্বলিত পোস্ট পড়তে চান এবং
নতুন কিছু জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। তাহলে
আমাদের আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। ভাল থাকবেন, সুস্থ
থাকবেন। ধন্যবাদ।